tag:blogger.com,1999:blog-81583610151784784312023-07-17T22:10:25.184-07:00Travelling Caterpillar ( ভবঘুরে শুয়োপোকা )mamunhttp://www.blogger.com/profile/14420475693942872141noreply@blogger.comBlogger2125tag:blogger.com,1999:blog-8158361015178478431.post-3652260080582591222016-06-21T11:58:00.001-07:002016-06-21T12:05:09.916-07:00ভাবনা বিলাস - ১ [ ব্রিটেনের ইউ রেফারেন্ডাম ঃ ব্রিটিশ বাঙ্গালীদের ভাবনা ]<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
দেশের বাইরে থাকা লোকজনের দেশ প্রেমটা নাকি একটু “বেশি বেশি” । বেশি
বেশি টার্মটা কিন্তু কোটের মধ্যে । খেয়াল কইরেন । দেশের বন্ধুদের কাছে এই
“বেশি বেশি” দেশ প্রেমের খোঁচাটা প্রায়ই শুনতে হয় । ভালো কোন অর্থে না
কিন্তু । প্রবাসী বাঙ্গালীর দেশপ্রেম সম্পর্কে আমার বেশ কয়েক বন্ধুর
ধ্যানধারনা অনেকটা এই রকম , “ তোরা সারাদিন আরামের চাকরীবাকরি করে, দিন
শেষে পাকা পায়খানায় বসে দেশের ভাবার বিলাসীতা করিস, জ্ঞান গম্ভীর মতামত দেস
আর ঝামেলা বাধাস । তোরা দেশের সমস্যার কি বুঝবি !! দেশের সমস্যা বুঝতে
চাইলে আমাদের মত বাসে, রিকশায় ঘামে ভিজে একাকার হয়ে কাজ করে দেখ ” । বাসে
বা রিকশায় চড়ে ঘামে ভিজে দেশ প্রেম করার সুযোগ আপাতত আমার হইতেছে না ।
বিদেশের মাটিতে নিজের আরামের চেয়ারে বসে ভাবনা তাই এইবার একটু বিদেশ নিয়েই
ভাবনা বিলাস করি ।<br />
ভাবনার টপিক ব্রিটেনের ইউ ইন অর আউট রেফারেন্ডাম । সহজ ভাষায় বিষয়টা আগে
ব্যখ্যা করি ঃ ইউনাইটেড কিংডম ( ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দান
আয়ারল্যান্ড ) বর্তমানে ইয়োরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইউ) সদস্য । গত কয়েকবছর
ধরেই ইউকের ( মুলতঃ ইংল্যান্ডের ) গোঁড়া জাতীয়তাবাদী একটা অংশ ইউ থেকে বের
হয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে । আগামী ২৩শে জুন ইউকের ভোটাররা ব্যালটের
মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভবিষ্যতের ইউকে ইউ এর সাথে থাকবে, না আলাদা পথে
এগোবে ? <br />
<br />
বিলাত নিয়ে ভাববো বললেও যথারীতি ভাবনার গাড়ি দেশীয় ট্র্যাকের বাইরে যেতে
পারে না । ব্রিটেনে বাঙ্গালীর সংখ্যা কম না । প্রায় ৭ লক্ষ ( ব্রিটিশ
নাগরিক এবং বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট ) বাঙ্গালী বসবাস করে । মজার বিষয় হচ্ছে
এই রেফারেন্ডেমে ইয়োরোপের নাগরিকরা এবং দেশের বাইরে থাকা অনেক ব্রিটিশ
নাগরিক* ভোট দিতে না পারলেও ৫ লক্ষ ব্রিটিশ (নাগরিক) বাঙ্গালীর পাশাপাশি,
কমনওয়েলথ দেশের নাগরিক হবার সুবাদে ২ লক্ষ ইমিগ্রেন্ট বাঙ্গালীও ভোট দেয়ার
অধিকার পাচ্ছে । কেউ কেউ ব্রিটেনে কমনওয়েলথ নাগরিকদের পাওয়া অনাকাংক্ষিত এই
ভোটের অধিকারকে ব্রিটিশ ইম্পেরিয়ালিজম হ্যাংওভারের হিসেবে অভিহিত করলেও
আপাতত সেই আলাপে যাচ্ছি না । এই লেখার মুল বিষয় ইউ রেফারেন্ডামের ব্যপারে
বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনা নিয়ে ।<br />
<br />
বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনার বিষয়ে বিশদ আলোচনার আগে এই রেফারেন্ডামের একটা
ওভারভিউ দেয়ার চেষ্টা করি । ক্যাম্পেইনের শুরু থেকেই ব্রিটিশ সোসাইটি মুলত
দুই ভাগে বিভক্ত ।<br />
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://i.imgur.com/RRNV20s.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://i.imgur.com/RRNV20s.png" height="510" width="640" /></a></div>
<br />
অর্থনীতি এই আলোচনা থেকে বাদ রাখছি কারন ইউকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন
গবেষেনা সংস্থা বেশ পরিষ্কার ভাবেই আশংকার কথা জানিয়ে দিয়েছে [3,4,5] ।
আইএমএফ এর ফোরকাস্ট বলছে ইউ ছেড়ে বেরিয়ে এলে আগামী কয়েক বছরে ব্রিটেনের
অর্থনীতি ৫% পর্যন্ত সংকুচিত হয়ে আসতে পারে। <br />
আঈন প্রনয়নের স্বার্বভৌমত্বের যুক্তিটিও মুলত উগ্র জাতীয়তাবাদী ইংলিশদের
ক্ষয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যবাদের অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে ভোট ক্যাশ করার চেষ্টা।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুর্য ডুবেছে মেলা বছর। তবু এদেশের পঞ্চাশোর্ধ অনেক
নাগরিকই সেই সাম্রাজ্যের অতীতের স্মৃতি রোমমন্থনে বুদ। ইউ এর পাশ করা
বিভিন্ন আঈন পরিবেশ রক্ষায় ( গ্রীন এবং ক্লীন এনার্জি পলিসি) এবং জলবায়ু
পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। পুঁজিবাদী দেশ ব্রিটেনে শ্রমিকের
অনেক অধিকারও ( সবেতনে বাতসরিক ছুটি, পিতৃত্বকালীন ছুটি) ইউ এর প্রনীত
আঈনের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে। এই আঈনগুলো না থাকলে পুঁজিবাদ বান্ধব যে
কোন সরকার এই অধিকার গুলো কমিয়ে ফেলতে পারে । <br />
প্রথম থেকেই যেই বিষয়টি এই রেফারেন্ডামে ইউ ছেড়ে যাওয়ার পক্ষের গাড়ির
চাকা সচল রেখেছে সেটা হলো ইমিগ্রেন্ট বিরোধী আবেগ। আগেই বলেছি ব্রিটেনের
একটা বড় জনগোষ্ঠির দাবী ইমিগ্রেন্টরা তাদের চাকরী এবং বিভিন্ন সরকারী ভাতায়
ভাগ বসাচ্ছে। প্রতিদেশেই এই মানসিকতার লোক থাকে। বাংলায় এর কোন সঠিক
অনুবাদ আছে কিনা জানিনা, তবে ইংরেজিতে এদের সাধারণত "বিগটস" বলা হয় । এরা
নিজের অযোগ্যতা, অকর্মন্যতা এবং দুর্ভাগ্যের জন্য হয় অন্য কাউকে দায়ী করে
তা সে অন্য দেশের ইমিগ্রেন্টই হোক বা নিজ দেশের অন্য অঞ্চলের লোকই হোক । <br />
মজার বিষয় হচ্ছে এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর রেফারেন্ডামে সাদা চামড়ার উগ্র
জাতীয়বাদীদের পাশাপাশি প্রবাসী বাঙ্গালী গোষ্ঠির একটা বড় অংশ যোগ দিয়েছে ।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কুফল নিয়ে বেশ জোর গলায় বক্তৃতা রাখছে
এবং প্রচারনা চালাচ্ছে । প্রথম বা দ্বিতীয় জেনারেশন মাইগ্রেন্ট বাঙালীর
হঠাৎ এমন উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ থেকেও বেশি ব্রিটিশ হয়ে ওঠাটা বেশ
দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে [ ** বিষয়টা শুধু বাঙ্গালীতেও সীমাবদ্ধ নয় । অনেক
ভারতীয় এবং পাকিস্তানি একই রাস্তার আছে ] । <br />
<br />
কারন খুজতে গিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে কয়েকটা কারণ খুজে পেলাম ঃ<br />
<br />
<b>ক) বিভিন্ন সরকারী ভাতার হ্রাস ঃ </b><br />
ব্রিটেনে বিভিন্ন সরকারী ভাতার সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা মাথাপিছু
অন্য যেকোন জাতি গোষ্ঠির চেয়ে বেশ এগিয়ে । প্রায় ৭০% বাংলাদেশী বংশদ্ভুত
ব্রিটিশ পরিবার নিম্ন আয়ের ক্যাটাগরিতে পড়ে [6] । এদের অধিকাংশই বিভিন্ন
সরকারী ভাতার উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে
বাঙ্গালীদের মধ্যে এই ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের অপব্যপবহার প্রবনতাটাও বেশি [7]
। গত ৫ বছরে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর অর্থ নীতির কারনে ওয়েলফেয়ার
সিস্টেমের বিভিন্ন খাতে ( বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ) ভাতা কমে গেছে ।
ব্রিটেনের উগ্রবাদী সাদাদের মত বাঙ্গালীরাও এই ভাতা কমে যাওয়ার জন্য
ইয়োরোপের নাগরিকদের দায়ী করছে । যদিও ব্রিটেনের কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের
২০১৪ সালের এক পরিসংখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারী ভাতা দাবী করা
নাগরিকদের মাত্র ২% ইয়োরোপীয় [৮] ।<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://i.imgur.com/gUtrVKQ.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://i.imgur.com/gUtrVKQ.png" height="265" width="320" /></a></div>
<br />
<br />
<br />
<b>খ) কর্ম সংস্থান ঃ </b><br />
গত কয়েক বছরে ব্রিটেনের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের (
গ্রীস, স্পেন ) অর্থনৈতিক মন্দার কারনে এসব দেশের প্রচুর নাগরিক কাজের
সন্ধানে ব্রিটেনের এসেছে । বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন ( এক দশকের কম সময় ধরে
এখানে থাকা মাইগ্রেন্টরা ) অভিবাসীদের একটা বড় অংশ মুলত আনস্কিল্ড কাজ করেই
থাকাখাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ চালায় । শ্রম বাজারে যোগান বেশি হওয়ায়
প্রতিযোগীতাও বেড়েছে । এটাও বাঙ্গালীর ইয়োরোপীয়ান বিরোধী সেন্টিমেন্টের
আরেকটা কারন ।<br />
<br />
<b>গ) বর্ণবাদ এবং শাসকগোষ্ঠির সাময়িক বন্ধুবাৎসল্যতা ঃ</b><br />
বাঙ্গালীরা ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় ইন্সটিউটিউশনাল রেসিজমের স্বীকার হলেও
২০০ বছরের ব্রিটিশ দাসত্ব আমাদের উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ দুর্ব্যবহারে
অভ্যস্ত করে দিয়েছে । অবচেতন মনে আমরা ব্রিটিশদের সুপিরিওর জাতি মানতে বেশ
স্বচ্ছন্দ বোধ করি । ব্রিটিশ প্রভুরা যখন আমাদের দুই এক লাইন ইংরেজী শুনে
আমাদের ইংরেজীর প্রশংসা করে আমরা বেশ গদগদ হয়ে যাই । তবে অর্ধশিক্ষিত এক
ব্রিটিশের কোন হুকুম মেনে নিতে শিখলেও ভাঙা ভাঙা ইংরেজী বলা অন্যান্য
ইয়োরোপের নাগরিককে আমরা ইংরেজী না জানা গ্রাম্য অশিক্ষিতের চেয়ে বেশি
সম্মান দিতে রাজী নই । তাছাড়া এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর আন্দোলনে উগ্রপন্থী
ব্রিটিশরা আমাদের একই নৌকায় ঠাঁই দিয়েছে এটাও আমাদের জন্য বেশ আনন্দের বিষয়
। তাই নিজেদের ব্রিটিশবান্ধব প্রমান করে আমরাও বেশ জোরেশোরে ইয়োরোপীয়ানদের
গালি দিচ্ছি ।<br />
<br />
<br />
<u><b>একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা </b></u><br />
জো কক্স ইয়র্কশায়ারের ছোট্ট একটা শহরের নবনির্বাচিত এমপি । গত বছরের সাধারন
নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে । সকল বর্ণ গোত্রের মানুষ
নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য । সিরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
শরনার্থীদের নিয়েও নিরলস কাজ করে গিয়েছে জো । এমপি নির্বাচিত হবার আগে
চেষ্টা করেছে বিভিন্ন চ্যারিটির মাধ্যমে ত্রান সংগ্রহ করতে রিফিউজিদের জন্য
। এমপি নির্বাচিত হবার পর প্রভাব খাটিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে
সিরিয়ান শরনার্থীদের সাহায্য করতে । সপ্তাহের একদিন এলাকার ভোটারদের সাথে
গনসংযোগের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সমস্যা শোনার চেষ্টা করে জো । গত ১৬ জুনও
ছিল তেমন এ একটি দিন । গনসংযোগ শেষ করে লাইব্রেরীর বাইরে এসে দাড়ানো মাত্রই
টমি মেয়ার নামের এক উগ্র শেতাংগ গুলি করে এবং কুপিয়ে আহত করে জো কে ।
বিকালে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে জো । অকালেই ঝরে যায় তরুন নিবেদিত
প্রান একজন মানুষ । হামলার সময় টমি মেয়ারের স্লোগান ছিল, “ডেথ টু
ট্রেইটরস, ফ্রিডম টু ব্রিটেন [ বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার করে ব্রিটেনকে মুক্ত
কর ] ” । আমার মত খুঁতখুতে মনের লোকজন উগ্র বর্নবাদী গোষ্ঠির ইমিগ্রেন্ট
বিরোধী নোংরা প্রচারনার সাথে এই হত্যার সম্পর্ক পেলেও উগ্র শেতাংদের মত
বাংলাদেশীদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না । তারা এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই
দেখছেন । <br />
<br />
<br />
<b>শেষ কথা </b><br />
বর্ণবাদের বিষাক্ত মানসিকতা ব্রিটেনে শুধু উগ্রবাদী শেতাংগ সুপ্রেমিস্ট
দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । মুলধারার অনেকের ভদ্রতার খোলসের ঠিক নিচেই এর
বাস । ঘৃনা এবং বর্নবাদ অনেকটা চেপে থাকা আগ্নেয়গীরির মত, একটু নাড়াচাড়া
খেলেই বেশ জোরেসোরে বের হয়ে আসে । বাংলাদেশের জামাত যেমন বিভিন্ন সময়
বিভিন্ন নামে, রুপে দেখা দেয়, ব্রিটেনে এই শেতাংগ সুপ্রেমিস্টরাও কখনো
ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (ইডিএল), কখনো ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ( বিএনপি
), কখনো ব্রিটেন ফার্স্ট । আরব এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইসিসের
উত্থান, ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো রসদ যোগাচ্ছে এই
উগ্র শেতাঙ্গ দল গুলোর উত্থানে [11] । গত কয়েক বছর ব্রিটেনে এদের অনেকেই
জড়ো হয়েছে ইউকে ইন্ডেপেন্ডেন্স পার্টি ( ইউকিপ ) নামের বর্ণবাদী দলের
ছায়াতলে । বিভিন্ন সময় দলের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনের নোংরা বর্নবাদী আচরন
প্রকাশ পাবার পরেও যখন ব্রিটেনের ১০% ( ৪০ লক্ষ ) ভোটার তাদের ভোট দেয় তখন
বর্ণবাদের ভুত যে বেশ ভালো ভাবেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সেটা বুঝতে রকেট
সাইন্টিস্ট হবার দরকার হয় না ।<br />
<br />
ইউকিপের নেতা নাইজেল ফারাজ [ছবি উপরে] কয়েকদিন আগেই তার ইয়োরোপীয়ান
খেদানোর আন্দোলনের নতুন পোস্টার উন্মোচন করেছেন । পোস্টারটা ভয়ানক বর্নবাদী
এবং জীবন নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকার কোটি কোটি শরনার্থীদের জন্য চরম অবমাননাকর
।পোস্টারের মুল বক্তব্য অনেকটা এমন, “হাজার হাজার সিরিয়ান শরনার্থী আসছে
ইয়োরোপের দিকে ধেয়ে । ব্রিটেন ইয়োরোপের সদস্য থাকলে আমাদেরও এই
শরনার্থীদের দায় ভার নিতে হবে । ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়াই তাই বুদ্ধিমানের
কাজ ।”<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://i.imgur.com/4zKYStk.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://i.imgur.com/4zKYStk.png" height="312" width="640" /></a></div>
<br />
ইয়োরোপের অন্যান্য দেশগুলো সিরিয়া থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর দায়িত্ব
নিলেও ব্রিটেন হাজার খানেকের বেশি নেয় নি । ব্রিটিশ বাঙ্গালী
প্যালেস্টাইন, সিরিয়ার রিফিউজিদের জন্য কাঁদিয়ে বুক ভাসিয়ে, ফেসবুকে হাজারে
হাজারে পোস্ট, লাখো লাখো লাইক দেয় কিন্তু ব্রিটেনের রাস্তায় সিরিয়া থেকে
আরো বেশি শরনার্থী নেয়ার ব্যপারে কোন আন্দোলন করতে নামে নি । ব্রিটেনের
শেতাঙ্গ লোকজন কোটি কোটি টাকার ত্রান পাঠালেও, ব্রিটেনের বাঙ্গালীরা
আইসিসের জন্য শ খানেক জিহাদী পাঠানো ছাড়া আর তেমন কিছুই দিতে পারেনি । তা
এই ব্রিটিশ বাঙ্গালী এখন নাইজেল ফারাজের মত বর্নবাদী লোকের পিছনে দাড়িয়ে
ইমিগ্রেন্ট বিরোধী স্লোগান দিবে এতে আশ্চর্য হবার আসলে কারন নেই । কারন
তাদের মুল ভয় নতুন শরনার্থীরা তাদের সরকারী ভাতায় ভাগ বসাবে, কাজে ভাগ
বসাবে ।<br />
তবে বাঙ্গালী যেটা ভুল করছে তা হলো বর্নবাদের ভুত কেবল ইয়োরোপীয়ান
খেদানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না । এখন তারা নাইজেল ফারাজের মত লোক এবং
তার বর্ণবাদী সমর্থক গোষ্ঠিকে সমর্থন নিয়ে তাদের পেশী শক্তিশালী করে তুলছে ।
ইয়োরোপীয়ান খেদানোর পর সেই বর্ণবাদী পেশী তাদের দিকে নজর ঘোরাবে । <br />
<br />
তথ্যসুত্র ঃ <br />
1. <a href="https://en.wikipedia.org/wiki/British_Bangladeshi">https://en.wikipedia.org/wiki/British_Bangladeshi</a><br />
2. <a href="http://www.migrationobservatory.ox.ac.uk/briefings/migrants-uk-overview">http://www.migrationobservatory.ox.ac.uk/briefings/migrants-uk-overview</a><br />
3. <a href="http://www.bbc.co.uk/news/uk-politics-eu-referendum-36371700">http://www.bbc.co.uk/news/uk-politics-eu-referendum-36371700</a><br />
4. <a href="http://www.bbc.co.uk/news/business-36561720">http://www.bbc.co.uk/news/business-36561720</a><br />
5. <a href="http://www.theguardian.com/politics/2016/jun/19/eu-referendum-nobel-prize-winning-economists-warn-of-long-term-brexit-damage">http://tinyurl.com/gvnujcx</a><br />
6. <a href="http://www.poverty.org.uk/06/index.shtml">http://www.poverty.org.uk/06/index.shtml</a><br />
7. <a href="http://www.express.co.uk/news/uk/579780/Police-raids-benefit-scheme-migrants">http://www.express.co.uk/news/uk/579780/Police-raids-benefit-scheme-migrants</a><br />
8. <a href="http://www.telegraph.co.uk/news/uknews/immigration/11255425/How-much-do-immigrants-really-claim-in-benefits.html">http://www.telegraph.co.uk/news/uknews/immigration/11255425/How-much-do-immigrants-really-claim-in-benefits.html</a><br />
9. <a href="https://www.theguardian.com/uk-news/2016/jun/18/thomas-mair-charged-with-of-mp-jo-cox">http://tinyurl.com/h6dfx4c</a><br />
10. <a href="http://www.theguardian.com/politics/2016/jun/16/nigel-farage-defends-ukip-breaking-point-poster-queue-of-migrants">http://www.theguardian.com/politics/2016/jun/16/nigel-farage-defends-ukip-breaking-point-poster-queue-of-migrants</a><br />
11. <a href="http://www.huffingtonpost.co.uk/2014/05/26/far-right-europe-election_n_5391873.html">http://www.huffingtonpost.co.uk/2014/05/26/far-right-europe-election_n_5391873.html</a><br />
<br /></div>
mamunhttp://www.blogger.com/profile/14420475693942872141noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8158361015178478431.post-56013828438860525652016-02-01T15:12:00.000-08:002016-02-01T15:26:18.004-08:00পাহাড়ে চড়ার গল্প<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি পাহাড় মানুষের মনকে উঁচু করে । আর সাগর মনকে করে বড় । ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে শিখলাম পাহাড় আর সাগরের প্রভাব শুধু মানুষের মনের উপরই সীমাবদ্ধ না, ইমেজের উপরও যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলে । মানুষকে সেলিব্রেটিও করে । পাহাড়ে চড়লেও করে আবার না চড়লেও করে । সাগরে ডুবলেও করে আবার না ডুবলেও করে । তা এই বিষয় নিয়ে মেলা যুক্তিতর্ক হতে পারে । কথার পিঠে কথা হতে পারে । যুক্তির প্রত্তুতরে কুযুক্তি আসতে পারে । তাই আজ আর সেদিকটা মাড়াচ্ছি না । আজ আমার পাহাড়ে চড়ার গল্প বলতে এসেছি, সেইদিকেই মনযোগ দেই ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
আমার ঘোরাঘুরির পার্টনার শ্যামা । ওকে বললাম , "চল পাহাড়ে উঠি" । ও বসে বসে চুল আচঁড়াচ্ছিলো । আমার কথা শুনে ওর চুল আচঁড়ানো বন্ধ হয়ে গেলো । আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো ঝাড়া ৩০ সেকেন্ড, যেন আমি বলেছি, "চলো চাঁদে চড়ি" । ৩০ সেকেন্ড পরে জিজ্ঞেস বললো, "পাহাড়ে চড়ে কি হবে ?" । আমি বললাম পাহাড়ে চড়ে সেলিব্রেটি হবো । ও এবার খিক খিক করে গায়ে জ্বালা ধরা হাসি হাসতে লাগলো ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- বললো, সেলিব্রাটি হতে হলে বুঝি পাহাড়ে চড়তে হয় ? অন্য কোন উপায় নেই ?
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- আমি বললাম, তা আছে । ব্লগ লিখে চেষ্টা করা যায় । কিন্তু লেখার হাত খারাপ । তার উপর সেলিব্রেটি ব্লগার হতে হলে ঘুরায়ে প্যাচায়ে সবদিকে বাতাস দিতে হয় । সেইদিকে চান্স কম ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- হুমমম, আর কোন উপায় নেই ?
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- আছে । নৌকায় চড়ে সাঁতরে সাগর পাড়ি দেয়া যায় । কিন্তু ইংল্যান্ডে প্রাইভেট নৌকা ভাড়া করার মেলা খরচ, আর তাছাড়া আটলান্টিকের পানিও ঠান্ডা ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- শ্যামা আবার খানিক্ষন গোল গোল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর প্রশ্ন করলো, নৌকায় চড়ে সাঁতরে সাগর পাড়ি দেয়াটা কেমন হলো ? মিনিট দশেক পর কয়েকটা ভিডিও ক্লিপ আর খবর দেখানোর পর ব্যপারটা ধরতে পারলো ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- খানিকক্ষন ভেবে চিন্তে জিজ্ঞেস করলো, তা কোন পাহাড়ে উঠবে বলে ঠিক করলে ? এভারেস্ট । মেলা খরচ কিন্তু । আর বেঁচে ফেরার চান্স খুবই কম ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- আরে ধুর, এভারেস্ট কে যায় । একে মেলা খরচ । তার উপর । হিমালয় রেঞ্জের সব কটা পাহাড় নিয়ে কেলেংকারীর ছড়াছড়ি । মাউন্ট স্নোডনে চড়বো । হাজার মিটারের উপর উঁচু ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- মোটে এক হাজার মিটার ! আর এই পাহাড়ে চড়ে তুমি হবে সেলিব্রেটি ?
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- আরে বাবা পাহাড়ে কি চড়েছি নাকি এর আগে কখনো ? একলাফে কি এভারেস্ট ওঠা যায় নাকি ? ধীরে ধীরে উঠতে হবে । হাজার দিয়েই শুরু করি । পরে না হয় ধীরে ধীরে বাড়ানো যাবে ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
- তা অন্য কাউকে সাথে না একাই যাবা ? আমাদের দুজনের যা অবস্থা, ১০ কদম জোরে হাটতে গেলে হাপানি ধরে যায় । শক্ত সমর্থ দেখে কাউকে সাথে নিলে ভালো হতো । আমরা দুজনেই কাত হয়ে গেলে ইমার্জেন্সিতে ফোন দেয়ার জন্য হলেও কাউকে দরকার ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
হুমমম, উত্তম প্রস্তাব । কিছুক্ষন ভেবেচিন্তে বললাম দ্রাষ্টিকে সাথে নিলে কেমন হয় ? নিয়মিত ব্যায়াম ট্যায়াম করে, দৌড়ঝাপ করে, স্ট্যামিনাও ভালো । ওকে বলে দেখলে হয় ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
দ্রাষ্টিকে বলতেই করতেই রাজি হয়ে গেল । বললো, অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না । ভালোই হয় একটু পাহাড় প্রকৃতির মাঝে ঘুরে আসতে পারলে । ঠিক করলাম করলাম পরের শনিবারই বেরিয়ে পড়বো । আমাদের ছোট্ট শহরটা থেকে স্নোডোনিয়া ন্যাশনাল পার্ক প্রায় ২৫০ মাইলের মত । চার ঘন্টার মত লাগবে ড্রাইভ করে যেতে । আমার গাড়িটা আবার কুম্ভকর্ণের মত । সারাটা বছর ঘুম পাড়িয়েই রাখি, কারন একবার জেগে উঠলেই চোঁ চোঁ করে তেল খায় । আড়াইশ মাইল যেতে আসতে প্রায় ১০০ পাউন্ডের তেল খেয়ে ফেলবে । আমাদের যে কোন ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে থাকার খরচটা অবশ্য একেবারেই কম । বড়সড় একটা তাঁবু আছে আমার । গাড়ির পেছনে ফেলে রওয়ানা দিলেই হয় । ব্রিটেনে হোটেল ভাড়া দিয়ে পোষানো যায় না । তাই বছর ৩ আগে থেকে ক্যাম্পিং করে থাকার অভ্যাস করে নিয়েছি । শ্যামা অবশ্য প্রথমে একটু গাঁইগুই করলেও সস্তায় ভালো লোকেশন থাকা, বারবিকিউ করে খাওয়া আর রাতে ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে আগুন পোহানোর অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতার পর এখন বেশ উৎসাহের সাথেই ক্যাম্পিং করে । পরে কোন এক পোস্টে স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ডসে কিংবা ওয়েল্সের পাহাড়ে তাবু পেতে থাকার অভিজ্ঞতার গল্প করবো । এই পোস্টের উদ্দেশ্য পাহাড়ে চড়ে সেলিব্রেটি হওয়ার গল্প করা ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
পরের শনিবার সকাল সকাল বের হয়ে পড়লাম । বিবিসির ওয়েদার ফোরকাস্টে ঝিরঝিরে বৃষ্টি সহ রোদেলা দিনে আশ্বাস দেয়া স্বত্তেও ভারী বর্ষনের মাঝেই প্রায় ২ ঘন্টা গাড়ি চালাতে হলো । ক্যাম্পসাইটে পৌছাতেই সকাল গড়িয়ে দুপুর । ক্যাম্পসাইটটার একদিকে পাহাড় আর আরেকদিকে টলটলে জলের লেক ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://i.imgur.com/BUDW9Ol.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://i.imgur.com/BUDW9Ol.jpg" height="425" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/XGpezXE.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/XGpezXE.jpg" height="384" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/3sU3QJo.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/3sU3QJo.jpg" height="426" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
স্নোডন মাউন্টেন রেঞ্জের একবারে গা ঘেষে সাইটটা । ক্যাম্পসাইটা মুলত ২ ভাগে ভাগ করা । এক পাশে কিছু মোঘলাই স্টাইলের বিরাট তাবু পাতা । দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাবুগুলো সারাবছরের জন্য পাতা । লোকজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেয় । একটা বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে বলে মনে হলো । অন্য পাশে আমাদের মত নিজের তাবু নিয়ে ঘুরতে আসা লোক জনের জায়গা । মাঝখান দিয়ে পাহাড় থেকে টলটলে জলের একটা ধারা এসে লেকে মিশেছে । বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়েকে দেখলাম রাবারের ডিংগি ফুলিয়ে লেকে নামছে । আমাদের পাশের তাবুর লোকজন দেখলাম দুপুরের খাবারের জন্য বিশাল বারবিকিউর আয়োজন করেছে । পোড়া মাংসের ঝাঁঝালো গন্ধটা নাকে আসার সাথে সাথেই পেটের খিদেটাও বেশ চাগিয়ে উঠলো । তাবুটা তাড়াতাড়ি পেতে ফেললাম তিনজন মিলে । শ্যামা আর দ্রাষ্টি বসে গেল পোর্টেবল চুলায় বাসা থেকে নিয়ে রান্না করে নিয়ে আসা মুরগীর মাংস আর রুটি গরম করতে । পাচ ঘন্টা জার্নি করা ক্লান্ত ক্ষুধার্ত শরীর । অমৃতের মতই লাগলো খাওয়ারটা । অমৃতের স্বাদ কেমন তা অবশ্য জানিনা । তবে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না । তাবুতে শোয়ার দুইটা কম্পার্টমেন্ট । খাওয়া শেষ করে উঠেই এয়ারবেডটা ফুলিয়ে ঢুকিয়ে দিলাম আমাদের কম্পার্টমেন্টে । এক মুহুর্ত দেরী না করে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম । তাবুর ভেতর থেকে লেকের প্রায় পুরোটাই দেখা যাচ্ছে । দেখতে দেখতে চোখটা নিজ থেকেই বুজে এল । মনে মধ্যে কি যেন একটা খচ খচ করতে লাগলো ? কে যেন একটু পর পর বলতে লাগলো, "পাহাড়ে চড়তে এসে এভাবে খেয়ে দেয়ে ঘুম দেয়াটা কি ঠিক হচ্ছে ?" কিছুক্ষন পর প্রশ্নকর্তা নিজেই ক্লান্ত হয়ে কোথায় যেন কেটে পড়লো । আমিও ডুব দিলাম ঘুমের রাজ্যে ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ঘুম ভেংগে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে প্রায় ৫ টা বেজে গেল । বাকি দুই হবু পর্বাতারোহী তখনো ঘুমোচ্ছে । আমার মত পাহাড়ে চড়ে সেলিব্রেটি হওয়ার দায় তাদের দুজনের কারোই নেই । ঘুমটাও তাই বেশ গভীর । কিছুক্ষন ডাকাডাকির পর অনিচ্ছা স্বত্তেও দুজনে উঠলো । দুজনে হাত মুখ ধুতে আসতে গেল, আর আমি এই ফাঁকে একটু চা করে নিলাম । গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনজনে ঠিক করলাম আগামী কাল পাহাড়ে ওঠার আগে আশপাশে খানিকটা হাটাহাটি করে নেয়া উচিৎ । হাত পায়ের মাংসপেশী গুলোর একটু ব্যায়াম হওয়া দরকার । গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম আশপাশের এলাকাটা ঘুরে দেখার জন্য ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ওয়েলসের পাহাড়ী এলাকার রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালানোর একটা মজার দিক হলো জার্নিটা কখনো একঘেয়ে হয় না । কখনো দুপাশে উঠে গেছে বিশাল পাহাড় । হঠাৎ করেই আবার কখনো পাহাড় সরে গিয়ে পাশে চলে আসে লেক । কখনো বা আবার রাস্তার গাড়ির সাথে পাল্লা পাশাপাশি বয়ে যেতে থাকে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী । এই হয়তো পাহাড়ের পকেটে জমে থাকা মেঘ এসে একপশলা বৃষ্টি ঝরিয়ে গেল । এক মিনিট পরেই হয়তো আবার দেখা গেল ঝলমলে সুর্যের আলো । রাস্তার দুধারে অসংখ্য ভেড়ার খামার । সারাদিন এরা মাথা গুজে ঘাস খাওয়া ছাড়া এদের তেমন কোন কাজ নেই । ঘাস খাবার সময় কোন নড়ন চড়ন নেই । প্রথম দেখায় মনে হয় ডামি । একটু ভালো করে তাকালে মুখের নড়াচড়াটা ধরা যায় । এদের মাঝ থেকেই মাঝে সাঝে কলম্বাসের মত অতি আগ্রহী ২/১ জন বেড়ার ফাঁফ্ফোকর দিয়ে নেমে আসে রাস্তায় ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
আমরা ন্যাশনাল ট্রাস্টের একটা কারপার্কে গাড়ি রেখে পাহাড়ি একটা নদীর পাশ ধরে ট্রেকিং শুরু করলাম । পাথুরে রাস্তা । কিছু কিছু যায়গায় শ্যাওলা পড়া । তিরিশ মিনিট এগোনের পর দেখলাম জলের ধারাটা বড় হতে হতে এখানটায় এসে বেশ বড় আকার ধারন করেছে । কায়াকিং করার সাইন দেখলাম আশপাশে কিচু । নদী এখানে কিছুটা চওড়া হলেও জলের গভীরতা খুব একটা বাড়েনি । এখানে সেখানে পাথর মাথা বের করে আছে । এর মাঝে কি করে কায়াকিং করে ঠিক বুঝতে পারলাম না । পেছনে পাহাড়ের পটভুমি, কুলকুল করে বয়ে চলা নদী আর ঘরে ফেরা পাখির শব্দ মিলে অসাধারন আবহাওয়া
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/khVPyNZ.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/khVPyNZ.jpg" height="456" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/giQAIeh.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/giQAIeh.jpg" height="354" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/XUtK4SD.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/XUtK4SD.jpg" height="274" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
তিনজনই কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকলাম । মিশে যাওয়ার চেষ্টা করলাম হয়তো । কতটা যেতে পারলাম জানি না । হয়তো আরো অনেকক্ষন থাকতাম । কিন্তু পিচ্ছিল পাহাড়ি রাস্তায় অন্ধকারে ট্রেকিং করে ফেরার ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ফেরার পথ ধরলাম । রাতে তাবুতে এসে হাতমুখ ধুয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় লম্বা হলাম । বই পড়তে পড়তে কখন চোখের পাতা বুজে এসেছে টের পাইনি ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<b>স্নোডোনিয়া
</b></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
সকাল বেলা ঘুম ভাংলো পাখির কিচিরমিচির শব্দে । বাকি দুজন তখনো ঘুমাচ্ছে । আমি তাবুর বাইরে এসে ক্যাম্প্সাইটের গা ঘেষে খাড়া উঠে যাওয়া পাহাড়ের সারির দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিচ্ছুক্ষন । বিশাল, অটল দাড়িয়ে আছে একে একে অপরের গা ঘেষে ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ডিম ভাজি আর পাউরুটি দিয়ে নাস্তা করার পর স্নোডোনিয়ার ম্যাপ আর টুরিস্ট গাইডবুক নিয়ে বসলাম । স্নোডোনিয়া ওঠার মুলত ৬ টা পথ । তিনটা মোটামুটি সহজ । ল্যানবেরিস, মাইনারস, পিগ, রেইহ ডু , ওয়াট্কিনস এবং স্নোডন রেঞ্জারস পাথ । প্রতিটা পথই ওঠানামা মিলিয়ে প্রায় ৭-৯ মাইলের মত । সময় লাগে প্রায় ৬-৭ ঘন্টার মত । এর মাঝে ল্যানবেরিস পাথটা সবচেয়ে সহজ । মাইনারস, পিগ, রেইহ ডু মোটামুটি কঠিন । ওয়াট্কিনস এবং স্নোডন রেঞ্জারস পাথ সবচেয়ে কঠিন । মাইনারস পাথ এবং পিগ ট্য্রাক দুটোই পেনি-পাস মাউন্টেন পাস থেকে শুরু । তাই ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম পেনি-পাসে গাড়ি পার্ক করে মাইনারস পাথ দিয়ে সামিটের উদ্দেশ্যে ওঠা শুরু করবো । নেমে আসার সময় পিগ ট্র্যাক ধরে নেমে আসবো ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/gtt9jU0.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/gtt9jU0.jpg" height="320" width="232" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছবির সুত্র ঃ কান্ট্রি ওয়াকিং ম্যাগাজিন ; জুন ২০১৫ এডিশন ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
মে মাস । সন্ধ্যা ৬/৭ টা পর্যন্ত দিনের আলো থাকে । আমরা সকাল ১০ঃ৩০ এর দিকে পেনি-পাসে গাড়ি পার্ক করে, দুপুরে খাওয়ার জন্য একটা করে স্যান্ডউইচ আর প্রত্যেকে ২ বোতল করে পানি নিয়ে মাইনারস পাথ দিয়ে হাটা শুরু করলাম । তাই ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম পেনি-পাসে গাড়ি পার্ক করে মাইনারস পাথ দিয়ে সামিটের উদ্দেশ্যে ওঠা শুরু করবো । গাইড বই থেকে জানতে পারলাম ব্রিটানিয়া কপারের খনি থেকে কপার নামিয়ে আনার জন্য খনি শ্রমিকরা এই পথ ব্যবহার করতো, তাই এর নাম মাইনার'স পাথ । মাইনার'স পাথের অর্ধেকটাই প্রায় সমতল । পথে ছোটবড় মিলিয়ে তিনটে লেক পড়ে । পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনার পানি প্রথমে নেমে আসে সবচেয়ে উপরের লেকটায়, তার থেকে আরেকটা ধারা নিয়ে মাঝেরটায়, সেটা আবার ছোট ধারায় পানি সরবরাহ করছে সবচেয়ে নিচের লেকটায় ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/BYH6zmx.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/BYH6zmx.jpg" height="426" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/9eExj2k.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/9eExj2k.jpg" height="364" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<span id="goog_462830804"></span><span id="goog_462830805"></span>
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/CsF0XXs.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/CsF0XXs.jpg" height="426" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/E4OWlMM.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/E4OWlMM.jpg" height="388" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
দ্বিতীয় লেকটার কাছ থেকেই মাইনার’স পাথ ধীরে ধীরে খাড়া হয়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো । কোন যায়গায় এক পাথর থেকে আরেক পাথরে লাফ দিয়ে, কোথাও আবার হামাগুড়ি দিয়ে । ক্যামেরার ব্যাগটা বয়ে আনার জন্য মনে মনে নিজেকেই নিজে গালি গালাজ করতে লাগলাম । দ্রাষ্টি আমাদের প্রায় ৫০ মিটার আগে আগে চলেছে । ওকেই টার্গেট করে আমি আর শ্যামা এগিয়ে চলেছি । ৫ মিনিট পরপর দাড়াচ্ছি । পানি খাচ্ছি । দ্রাষ্টি আরো এগিয়ে যাচ্ছে দেখে আবার ওঠা শুরু করছি ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
এইভাবেই ঘন্টাখানেক ওঠার পর হঠাৎ পেছন থেকে শুনি, "নারায় তাকবীর, আল্লাহু আকবার" । এমনিতেই প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠছিলাম । এই স্লোগান শুনে একেবারেই ফ্ল্যাট হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লাম । শ্যামা দেখলাম আবার চোখ গোল গোল করে পেছনে তাকিয়ে আছে । আমি ডাক দিয়ে বললাম, “মাথা নামাও, তাড়াতাড়ি মাথা নামাও" । ও আমার অবস্থা বুঝতে পেরে হো হো করে হাসতে শুরু করলো । আমিও মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি চারজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী ভাই আমার মতই হামাগুড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে । চারজনের মাঝে তিনজন বেশ তান্দুরুস্ত । তারা তিনটে ছোট খাটো পাথর ধরে ঝুলে থাকার থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে । যদিও কেন তা ঠিক বুঝছি না, কারণ তারা যেখানে আছে সেখানে পাহাড়ে ঢাল ১৫- ২০ ডিগ্রীর বেশি না । নিচের তিনজন হাল ছেড়ে দিয়ে ফেরত যেতে চাইছে । চার নম্বরজন খানিকটা উপরে বড়সড় একটা পাথরের উপরে বসে নিচের সঙ্গীদের মনোবল চাঙা করার জন্য নারায় তাকবীর স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে । আমি দ্রুত ধাক্কাটা সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম । শ্যামার হাসির শব্দে পাথরের উপর বসে থাকা লোকটা কুতকুতে চোখে আমাদের দিকে তাকালো । পরিস্থিতির অনুকুলে যাবার জন্য কড়া ককনি এক্সেন্টে বললাম, “ইট’স গিভস ইউ পাওয়ার, ইনি* (*ইজন’ট ইট এর শর্ট ফর্ম) ? " । ব্রাদার সাথে সাথে বিশাল দাঁড়ি গোঁফের জংগলের ভেতর থেকে হলদেটে দাঁত বের করে হেসে জানালেন, "ইয়া ব্রাদার" । আমিও শ্যামাকে দ্রুত উঠার জন্য তাড়া দিলাম । ( পথে অবশ্য আরো বেশ কিছু ব্রাদারের সাথে মোলাকাত হয়েছিল । বাংলাদেশীদের ঘোরাঘুরি সাধারণত দল বেঁধে ফটোসেশন, শপিং আর হালাল খাবার খোঁজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে । তাই ওয়েলসের পাহাড়ে ব্রাদারদের দল বেঁধে নারায়-তকবীর স্লোগান দিতে দিতে উঠতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলাম । পরে অবশ্য দল বেঁধে সিরিয়া যাওয়ার ঢল দেখে ব্যপারটা কিছুটা বোধগম্য হয়েছিল )
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/caDDZaF.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/caDDZaF.jpg" height="338" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছবি ঃ প্রায় চুড়ার কাছাকাছি ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
মাইনারস পাথের খাড়া অংশটা উঠে যাওয়ার পর রাস্তাটা পিগ ট্র্যাকের সাথে মিলে যায় । এই রাস্তাই উঠে গেছে একেবারে চুড়া পর্যন্ত । রাস্তা শব্দটা আসলে এই পথের সাথে খুব একটা মানানসই না । এক পাথর থেকে আরেক পাথরে লাফ দিয়ে, কখনো আবার খাড়া ঢালের কার্নিশ বেয়ে প্রতি ৫ মিনিটে একবার বিরতি দিয়ে, পানি আর দ্রাষ্টির তাড়া খেয়ে আমরা ধীরে ধীরে উঠতে লাগলাম । পাহাড়ের প্রতিটা পকেটের আবহাওয়া পাশের পকেট থেকে ভিন্ন । এই কুয়াশা, এই মেঘ গা ঘেঁষে যাচ্ছে তো আবার এই রোদ । উপরে ওঠার সাথে সাথে চারদিকের দৃশ্য দেখে ক্লান্তিটাও ধীরে ধীরে কমে আসছে । আমি কিছুক্ষন পর পর দাড়িয়ে ছবি তুলছি । এভাবে প্রায় ঘন্টা দেড়েক উঠার পর চুড়ার প্রায় কাছাকাছি পৌছে গেলাম । তাকিয়ে দেখলাম দ্রাষ্টি আমাদের আগেই চুড়ার কাছে পৌছে একটা পাথরের উপর বসে স্যান্ডউইচ খাচ্ছে । কয়েকটা সিগাল কয়েকফিট দুরে বসে জুলজুল করে ওর খাওয়া দেখছে ? স্নোডোনিয়া সমুদ্র থেকে খুব বেশি দুরে নয়, কিন্তু এতো উপরে সিগাল দেখে বেশ অবাকই লাগলো । হঠাত খেয়াল করলাম ওর পেছনে একটা পাথরের পেছন থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে । কেউ আগুন লাগিয়ে দিল নাকি কিছুতে, এই ভেবে এগিয়ে যেতেই খাদের মত একটা যায়গায় টেনের লাইন নজরে এলো । কালো রঙ্গের মান্ধাতার আমাদের একটা ট্রেনের বগি থেকে হুড়মুড় করে একদল চাইনিজ টুরিষ্ট নেমে এলো এবং এসেই আইপ্যাড বের করে বিভিন্ন পোজে ছবি খিচতে লাগলো ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/ESU8YQt.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/ESU8YQt.jpg" height="390" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/2Bcc1I4.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/2Bcc1I4.jpg" height="426" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছবি : তিন মুর্তি ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/ESU8YQt.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/ESU8YQt.jpg" height="390" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছবি ঃ বার্ডস আই ভিউ
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/Uxk8eda.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/Uxk8eda.jpg" height="266" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
শ্যামা কখন যে আমার পেছনে এসে দাড়িয়েছে টের পাইনি । শ্যামার গলার বিভিন্ন রকম টোন আছে । এর মাঝে একটা হচ্ছে না বুঝেও না বোঝার ভান করে ভাবে কোন অপছন্দনীয় বিষয়ে প্রশ্ন করা ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
সেই টোনেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "এই পাহাড়ে যে ট্রেনে চড়া যায়, এই ব্যপারটা কি আগে থেকে জানতে ?"
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
না, এই মাত্রই টের পেলাম ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
এই পাহাড়ে চড়ে আসলেই সেলিব্রেটি হতে পারবা তো ?
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
আমি চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম । শ্যামা কোন উত্তর না পেয়ে ব্যাগ থেকে স্যান্ডউইচ বের করে তাতে মনযোগ দিল । আমিও মনের কষ্ট চাপা দিয়ে চুড়ার দিকে হাটা দিলাম আর মনে মনে নিজেকে বোঝাতে থাকলাম, "এভরি ফেইলার ইজ এ ফাউন্ডেশন টু মাই ফেম ...। " মাউন্ট স্নোডনের ২০০ মিটার দুরেই স্নোডোনিয়া রেঞ্জের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া ক্রিব-গচ । উচ্চতায় স্নোডনের চেয়ে সামান্য ছোট হলেও দুর্গমতার দিক থেকে স্নোডনের চেয়ে কয়েক কাঠি উপরে । ফেমাস হবার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছার ইকুয়েশন মিলিয়ে ভেবে দেখলাম বেঁচে থাকলে ফেমাস হওয়া যাবে কিন্তু ফেমাস হবার লোভে এই ক্লান্ত শরীরে ক্রিব-গচে চড়তে গেলে আর ফিরতে হবে না ।
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/UR4c0YY.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/UR4c0YY.jpg" height="342" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://imgur.com/4fzs2NR.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" src="http://imgur.com/4fzs2NR.jpg" height="374" width="640" /></a></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
ছবি ঃ পিগ ট্র্যাক ধরে নেমে আসার পথে । </div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
স্যান্ডউইচটা খেতে খেতে একটা বড় পাথরের উপর বসলাম । যেদিকে যতদুর চোখ যায় ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি আর ফাঁকে ফাঁকে টলটলে জলের লেক । খানিক পর পর নিচু হয়ে ভেসে থাকা মেঘের রাশি এসে ঢেকে দিচ্ছে পাহাড়ের সারি । সবুজের পটভুমিতে রৌদ্র-ছায়ার এই অসাধারন লুকোচুরি দেখার জন্য আরো কিছুক্ষন বসে থাকতে ইচ্ছে করলেও নামার জন্য উঠতে হলো । শ্যামা আর দ্রাষ্টিকে ডেকে নিচে নামার প্রস্তুতি নিলাম । তিনজনে ঠিক করলাম নামার সময় পিগ ট্র্যাক ধরে নেমে আসব ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
<br /></div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
নেমে আসার সময়ের একটা মজার অভিজ্ঞতা দিয়ে এই লম্বা উপাখ্যানের ইতি টানি । ১১-১২ বছরের ছেলেমেয়ের ছোটখাটো একটা দল আর তাদের কয়েকজন শিক্ষিকা আমাদের পাশাপাশি নেমে আসছিল । ইউরোপীয় ছেলেমেয়ের ভিড়ে একজন মাত্র উপমহাদেশীয় মেয়ে । অন্যান্য বাচ্চারা নিজ নিজ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নেমে গেলেও কেবল এই মেয়েটার ব্যাগ তার টিচারের কাঁধে । তারপরও মেয়েটা একটু পরপরই থেমে যাচ্ছে, কাঁদতে শুরু করছে এবং অভিযোগ জানাচ্ছে সে আর হাঁটতে পারছে না । যেই টিচার মেয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নামছে তিনি মেয়েটাকে বোঝাচ্ছেন, “দেখো এই পাথুরে পাহাড়ি রাস্তায় কেউ তোমাকে সাহায্য করতে আসবে না । নিজের পায়ে হেঁটেই তোমাকে নামতে হবে । যত দ্রুত তুমি নামতে পারবে, তত দ্রুত হোটেলে গিয়ে গরম গরম সুপ খেয়ে বিছানায় যেতে পারবে । “ আমাদের উপমহাদেশের লোকজন সাধারনত তীর্থযাত্রা আর সহজেই একসেসিবল টু্যরিস্ট ডেস্টিনেশনের বাইরে কোথায় খুব একটা যায় না । বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর বাচ্চাকাচ্চার ঢালটা সামনে তুলে ধরে নিজেদের ঘরকুনো অভ্যাসের ডিফেন্ড করেন । তাদের দেখাদেখি ছেলেমেয়েও ঘরকুনো হয়েই বড় হয়ে । আমাদের প্রজন্মের তাও কপাল ভালো যে আমাদের সময়ে নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন, তারেক অনু, এম এ মুহিতের মত কয়েকজন জন্মেছেন । এদের অভিযানের দুঃসাহসিক গল্পই আমাদের মত ঘরকুনোদের সাহস যোগায় দরজার বাইরে পা দেয়ার ।
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
মামুনুর রশীদ
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
==========
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
mamun babu ২০০১ at gmail.com
</div>
<div style="font-family: 'Helvetica Neue'; font-size: 14px;">
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি
</div>
</div>
mamunhttp://www.blogger.com/profile/14420475693942872141noreply@blogger.com0