দেশের বাইরে থাকা লোকজনের দেশ প্রেমটা নাকি একটু “বেশি বেশি” । বেশি
বেশি টার্মটা কিন্তু কোটের মধ্যে । খেয়াল কইরেন । দেশের বন্ধুদের কাছে এই
“বেশি বেশি” দেশ প্রেমের খোঁচাটা প্রায়ই শুনতে হয় । ভালো কোন অর্থে না
কিন্তু । প্রবাসী বাঙ্গালীর দেশপ্রেম সম্পর্কে আমার বেশ কয়েক বন্ধুর
ধ্যানধারনা অনেকটা এই রকম , “ তোরা সারাদিন আরামের চাকরীবাকরি করে, দিন
শেষে পাকা পায়খানায় বসে দেশের ভাবার বিলাসীতা করিস, জ্ঞান গম্ভীর মতামত দেস
আর ঝামেলা বাধাস । তোরা দেশের সমস্যার কি বুঝবি !! দেশের সমস্যা বুঝতে
চাইলে আমাদের মত বাসে, রিকশায় ঘামে ভিজে একাকার হয়ে কাজ করে দেখ ” । বাসে
বা রিকশায় চড়ে ঘামে ভিজে দেশ প্রেম করার সুযোগ আপাতত আমার হইতেছে না ।
বিদেশের মাটিতে নিজের আরামের চেয়ারে বসে ভাবনা তাই এইবার একটু বিদেশ নিয়েই
ভাবনা বিলাস করি ।
ভাবনার টপিক ব্রিটেনের ইউ ইন অর আউট রেফারেন্ডাম । সহজ ভাষায় বিষয়টা আগে ব্যখ্যা করি ঃ ইউনাইটেড কিংডম ( ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড ) বর্তমানে ইয়োরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইউ) সদস্য । গত কয়েকবছর ধরেই ইউকের ( মুলতঃ ইংল্যান্ডের ) গোঁড়া জাতীয়তাবাদী একটা অংশ ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে । আগামী ২৩শে জুন ইউকের ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভবিষ্যতের ইউকে ইউ এর সাথে থাকবে, না আলাদা পথে এগোবে ?
বিলাত নিয়ে ভাববো বললেও যথারীতি ভাবনার গাড়ি দেশীয় ট্র্যাকের বাইরে যেতে পারে না । ব্রিটেনে বাঙ্গালীর সংখ্যা কম না । প্রায় ৭ লক্ষ ( ব্রিটিশ নাগরিক এবং বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট ) বাঙ্গালী বসবাস করে । মজার বিষয় হচ্ছে এই রেফারেন্ডেমে ইয়োরোপের নাগরিকরা এবং দেশের বাইরে থাকা অনেক ব্রিটিশ নাগরিক* ভোট দিতে না পারলেও ৫ লক্ষ ব্রিটিশ (নাগরিক) বাঙ্গালীর পাশাপাশি, কমনওয়েলথ দেশের নাগরিক হবার সুবাদে ২ লক্ষ ইমিগ্রেন্ট বাঙ্গালীও ভোট দেয়ার অধিকার পাচ্ছে । কেউ কেউ ব্রিটেনে কমনওয়েলথ নাগরিকদের পাওয়া অনাকাংক্ষিত এই ভোটের অধিকারকে ব্রিটিশ ইম্পেরিয়ালিজম হ্যাংওভারের হিসেবে অভিহিত করলেও আপাতত সেই আলাপে যাচ্ছি না । এই লেখার মুল বিষয় ইউ রেফারেন্ডামের ব্যপারে বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনা নিয়ে ।
বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনার বিষয়ে বিশদ আলোচনার আগে এই রেফারেন্ডামের একটা ওভারভিউ দেয়ার চেষ্টা করি । ক্যাম্পেইনের শুরু থেকেই ব্রিটিশ সোসাইটি মুলত দুই ভাগে বিভক্ত ।
অর্থনীতি এই আলোচনা থেকে বাদ রাখছি কারন ইউকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন গবেষেনা সংস্থা বেশ পরিষ্কার ভাবেই আশংকার কথা জানিয়ে দিয়েছে [3,4,5] । আইএমএফ এর ফোরকাস্ট বলছে ইউ ছেড়ে বেরিয়ে এলে আগামী কয়েক বছরে ব্রিটেনের অর্থনীতি ৫% পর্যন্ত সংকুচিত হয়ে আসতে পারে।
আঈন প্রনয়নের স্বার্বভৌমত্বের যুক্তিটিও মুলত উগ্র জাতীয়তাবাদী ইংলিশদের ক্ষয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যবাদের অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে ভোট ক্যাশ করার চেষ্টা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুর্য ডুবেছে মেলা বছর। তবু এদেশের পঞ্চাশোর্ধ অনেক নাগরিকই সেই সাম্রাজ্যের অতীতের স্মৃতি রোমমন্থনে বুদ। ইউ এর পাশ করা বিভিন্ন আঈন পরিবেশ রক্ষায় ( গ্রীন এবং ক্লীন এনার্জি পলিসি) এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। পুঁজিবাদী দেশ ব্রিটেনে শ্রমিকের অনেক অধিকারও ( সবেতনে বাতসরিক ছুটি, পিতৃত্বকালীন ছুটি) ইউ এর প্রনীত আঈনের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে। এই আঈনগুলো না থাকলে পুঁজিবাদ বান্ধব যে কোন সরকার এই অধিকার গুলো কমিয়ে ফেলতে পারে ।
প্রথম থেকেই যেই বিষয়টি এই রেফারেন্ডামে ইউ ছেড়ে যাওয়ার পক্ষের গাড়ির চাকা সচল রেখেছে সেটা হলো ইমিগ্রেন্ট বিরোধী আবেগ। আগেই বলেছি ব্রিটেনের একটা বড় জনগোষ্ঠির দাবী ইমিগ্রেন্টরা তাদের চাকরী এবং বিভিন্ন সরকারী ভাতায় ভাগ বসাচ্ছে। প্রতিদেশেই এই মানসিকতার লোক থাকে। বাংলায় এর কোন সঠিক অনুবাদ আছে কিনা জানিনা, তবে ইংরেজিতে এদের সাধারণত "বিগটস" বলা হয় । এরা নিজের অযোগ্যতা, অকর্মন্যতা এবং দুর্ভাগ্যের জন্য হয় অন্য কাউকে দায়ী করে তা সে অন্য দেশের ইমিগ্রেন্টই হোক বা নিজ দেশের অন্য অঞ্চলের লোকই হোক ।
মজার বিষয় হচ্ছে এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর রেফারেন্ডামে সাদা চামড়ার উগ্র জাতীয়বাদীদের পাশাপাশি প্রবাসী বাঙ্গালী গোষ্ঠির একটা বড় অংশ যোগ দিয়েছে । সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কুফল নিয়ে বেশ জোর গলায় বক্তৃতা রাখছে এবং প্রচারনা চালাচ্ছে । প্রথম বা দ্বিতীয় জেনারেশন মাইগ্রেন্ট বাঙালীর হঠাৎ এমন উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ থেকেও বেশি ব্রিটিশ হয়ে ওঠাটা বেশ দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে [ ** বিষয়টা শুধু বাঙ্গালীতেও সীমাবদ্ধ নয় । অনেক ভারতীয় এবং পাকিস্তানি একই রাস্তার আছে ] ।
কারন খুজতে গিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে কয়েকটা কারণ খুজে পেলাম ঃ
ক) বিভিন্ন সরকারী ভাতার হ্রাস ঃ
ব্রিটেনে বিভিন্ন সরকারী ভাতার সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা মাথাপিছু অন্য যেকোন জাতি গোষ্ঠির চেয়ে বেশ এগিয়ে । প্রায় ৭০% বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্রিটিশ পরিবার নিম্ন আয়ের ক্যাটাগরিতে পড়ে [6] । এদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারী ভাতার উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাঙ্গালীদের মধ্যে এই ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের অপব্যপবহার প্রবনতাটাও বেশি [7] । গত ৫ বছরে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর অর্থ নীতির কারনে ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের বিভিন্ন খাতে ( বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ) ভাতা কমে গেছে । ব্রিটেনের উগ্রবাদী সাদাদের মত বাঙ্গালীরাও এই ভাতা কমে যাওয়ার জন্য ইয়োরোপের নাগরিকদের দায়ী করছে । যদিও ব্রিটেনের কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের এক পরিসংখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারী ভাতা দাবী করা নাগরিকদের মাত্র ২% ইয়োরোপীয় [৮] ।
খ) কর্ম সংস্থান ঃ
গত কয়েক বছরে ব্রিটেনের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের ( গ্রীস, স্পেন ) অর্থনৈতিক মন্দার কারনে এসব দেশের প্রচুর নাগরিক কাজের সন্ধানে ব্রিটেনের এসেছে । বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন ( এক দশকের কম সময় ধরে এখানে থাকা মাইগ্রেন্টরা ) অভিবাসীদের একটা বড় অংশ মুলত আনস্কিল্ড কাজ করেই থাকাখাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ চালায় । শ্রম বাজারে যোগান বেশি হওয়ায় প্রতিযোগীতাও বেড়েছে । এটাও বাঙ্গালীর ইয়োরোপীয়ান বিরোধী সেন্টিমেন্টের আরেকটা কারন ।
গ) বর্ণবাদ এবং শাসকগোষ্ঠির সাময়িক বন্ধুবাৎসল্যতা ঃ
বাঙ্গালীরা ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় ইন্সটিউটিউশনাল রেসিজমের স্বীকার হলেও ২০০ বছরের ব্রিটিশ দাসত্ব আমাদের উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ দুর্ব্যবহারে অভ্যস্ত করে দিয়েছে । অবচেতন মনে আমরা ব্রিটিশদের সুপিরিওর জাতি মানতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করি । ব্রিটিশ প্রভুরা যখন আমাদের দুই এক লাইন ইংরেজী শুনে আমাদের ইংরেজীর প্রশংসা করে আমরা বেশ গদগদ হয়ে যাই । তবে অর্ধশিক্ষিত এক ব্রিটিশের কোন হুকুম মেনে নিতে শিখলেও ভাঙা ভাঙা ইংরেজী বলা অন্যান্য ইয়োরোপের নাগরিককে আমরা ইংরেজী না জানা গ্রাম্য অশিক্ষিতের চেয়ে বেশি সম্মান দিতে রাজী নই । তাছাড়া এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর আন্দোলনে উগ্রপন্থী ব্রিটিশরা আমাদের একই নৌকায় ঠাঁই দিয়েছে এটাও আমাদের জন্য বেশ আনন্দের বিষয় । তাই নিজেদের ব্রিটিশবান্ধব প্রমান করে আমরাও বেশ জোরেশোরে ইয়োরোপীয়ানদের গালি দিচ্ছি ।
একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা
জো কক্স ইয়র্কশায়ারের ছোট্ট একটা শহরের নবনির্বাচিত এমপি । গত বছরের সাধারন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে । সকল বর্ণ গোত্রের মানুষ নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য । সিরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরনার্থীদের নিয়েও নিরলস কাজ করে গিয়েছে জো । এমপি নির্বাচিত হবার আগে চেষ্টা করেছে বিভিন্ন চ্যারিটির মাধ্যমে ত্রান সংগ্রহ করতে রিফিউজিদের জন্য । এমপি নির্বাচিত হবার পর প্রভাব খাটিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে সিরিয়ান শরনার্থীদের সাহায্য করতে । সপ্তাহের একদিন এলাকার ভোটারদের সাথে গনসংযোগের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সমস্যা শোনার চেষ্টা করে জো । গত ১৬ জুনও ছিল তেমন এ একটি দিন । গনসংযোগ শেষ করে লাইব্রেরীর বাইরে এসে দাড়ানো মাত্রই টমি মেয়ার নামের এক উগ্র শেতাংগ গুলি করে এবং কুপিয়ে আহত করে জো কে । বিকালে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে জো । অকালেই ঝরে যায় তরুন নিবেদিত প্রান একজন মানুষ । হামলার সময় টমি মেয়ারের স্লোগান ছিল, “ডেথ টু ট্রেইটরস, ফ্রিডম টু ব্রিটেন [ বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার করে ব্রিটেনকে মুক্ত কর ] ” । আমার মত খুঁতখুতে মনের লোকজন উগ্র বর্নবাদী গোষ্ঠির ইমিগ্রেন্ট বিরোধী নোংরা প্রচারনার সাথে এই হত্যার সম্পর্ক পেলেও উগ্র শেতাংদের মত বাংলাদেশীদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না । তারা এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছেন ।
শেষ কথা
বর্ণবাদের বিষাক্ত মানসিকতা ব্রিটেনে শুধু উগ্রবাদী শেতাংগ সুপ্রেমিস্ট দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । মুলধারার অনেকের ভদ্রতার খোলসের ঠিক নিচেই এর বাস । ঘৃনা এবং বর্নবাদ অনেকটা চেপে থাকা আগ্নেয়গীরির মত, একটু নাড়াচাড়া খেলেই বেশ জোরেসোরে বের হয়ে আসে । বাংলাদেশের জামাত যেমন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে, রুপে দেখা দেয়, ব্রিটেনে এই শেতাংগ সুপ্রেমিস্টরাও কখনো ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (ইডিএল), কখনো ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ( বিএনপি ), কখনো ব্রিটেন ফার্স্ট । আরব এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইসিসের উত্থান, ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো রসদ যোগাচ্ছে এই উগ্র শেতাঙ্গ দল গুলোর উত্থানে [11] । গত কয়েক বছর ব্রিটেনে এদের অনেকেই জড়ো হয়েছে ইউকে ইন্ডেপেন্ডেন্স পার্টি ( ইউকিপ ) নামের বর্ণবাদী দলের ছায়াতলে । বিভিন্ন সময় দলের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনের নোংরা বর্নবাদী আচরন প্রকাশ পাবার পরেও যখন ব্রিটেনের ১০% ( ৪০ লক্ষ ) ভোটার তাদের ভোট দেয় তখন বর্ণবাদের ভুত যে বেশ ভালো ভাবেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সেটা বুঝতে রকেট সাইন্টিস্ট হবার দরকার হয় না ।
ইউকিপের নেতা নাইজেল ফারাজ [ছবি উপরে] কয়েকদিন আগেই তার ইয়োরোপীয়ান খেদানোর আন্দোলনের নতুন পোস্টার উন্মোচন করেছেন । পোস্টারটা ভয়ানক বর্নবাদী এবং জীবন নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকার কোটি কোটি শরনার্থীদের জন্য চরম অবমাননাকর ।পোস্টারের মুল বক্তব্য অনেকটা এমন, “হাজার হাজার সিরিয়ান শরনার্থী আসছে ইয়োরোপের দিকে ধেয়ে । ব্রিটেন ইয়োরোপের সদস্য থাকলে আমাদেরও এই শরনার্থীদের দায় ভার নিতে হবে । ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়াই তাই বুদ্ধিমানের কাজ ।”
ইয়োরোপের অন্যান্য দেশগুলো সিরিয়া থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর দায়িত্ব নিলেও ব্রিটেন হাজার খানেকের বেশি নেয় নি । ব্রিটিশ বাঙ্গালী প্যালেস্টাইন, সিরিয়ার রিফিউজিদের জন্য কাঁদিয়ে বুক ভাসিয়ে, ফেসবুকে হাজারে হাজারে পোস্ট, লাখো লাখো লাইক দেয় কিন্তু ব্রিটেনের রাস্তায় সিরিয়া থেকে আরো বেশি শরনার্থী নেয়ার ব্যপারে কোন আন্দোলন করতে নামে নি । ব্রিটেনের শেতাঙ্গ লোকজন কোটি কোটি টাকার ত্রান পাঠালেও, ব্রিটেনের বাঙ্গালীরা আইসিসের জন্য শ খানেক জিহাদী পাঠানো ছাড়া আর তেমন কিছুই দিতে পারেনি । তা এই ব্রিটিশ বাঙ্গালী এখন নাইজেল ফারাজের মত বর্নবাদী লোকের পিছনে দাড়িয়ে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী স্লোগান দিবে এতে আশ্চর্য হবার আসলে কারন নেই । কারন তাদের মুল ভয় নতুন শরনার্থীরা তাদের সরকারী ভাতায় ভাগ বসাবে, কাজে ভাগ বসাবে ।
তবে বাঙ্গালী যেটা ভুল করছে তা হলো বর্নবাদের ভুত কেবল ইয়োরোপীয়ান খেদানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না । এখন তারা নাইজেল ফারাজের মত লোক এবং তার বর্ণবাদী সমর্থক গোষ্ঠিকে সমর্থন নিয়ে তাদের পেশী শক্তিশালী করে তুলছে । ইয়োরোপীয়ান খেদানোর পর সেই বর্ণবাদী পেশী তাদের দিকে নজর ঘোরাবে ।
তথ্যসুত্র ঃ
1. https://en.wikipedia.org/wiki/British_Bangladeshi
2. http://www.migrationobservatory.ox.ac.uk/briefings/migrants-uk-overview
3. http://www.bbc.co.uk/news/uk-politics-eu-referendum-36371700
4. http://www.bbc.co.uk/news/business-36561720
5. http://tinyurl.com/gvnujcx
6. http://www.poverty.org.uk/06/index.shtml
7. http://www.express.co.uk/news/uk/579780/Police-raids-benefit-scheme-migrants
8. http://www.telegraph.co.uk/news/uknews/immigration/11255425/How-much-do-immigrants-really-claim-in-benefits.html
9. http://tinyurl.com/h6dfx4c
10. http://www.theguardian.com/politics/2016/jun/16/nigel-farage-defends-ukip-breaking-point-poster-queue-of-migrants
11. http://www.huffingtonpost.co.uk/2014/05/26/far-right-europe-election_n_5391873.html
ভাবনার টপিক ব্রিটেনের ইউ ইন অর আউট রেফারেন্ডাম । সহজ ভাষায় বিষয়টা আগে ব্যখ্যা করি ঃ ইউনাইটেড কিংডম ( ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড ) বর্তমানে ইয়োরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইউ) সদস্য । গত কয়েকবছর ধরেই ইউকের ( মুলতঃ ইংল্যান্ডের ) গোঁড়া জাতীয়তাবাদী একটা অংশ ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে । আগামী ২৩শে জুন ইউকের ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভবিষ্যতের ইউকে ইউ এর সাথে থাকবে, না আলাদা পথে এগোবে ?
বিলাত নিয়ে ভাববো বললেও যথারীতি ভাবনার গাড়ি দেশীয় ট্র্যাকের বাইরে যেতে পারে না । ব্রিটেনে বাঙ্গালীর সংখ্যা কম না । প্রায় ৭ লক্ষ ( ব্রিটিশ নাগরিক এবং বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট ) বাঙ্গালী বসবাস করে । মজার বিষয় হচ্ছে এই রেফারেন্ডেমে ইয়োরোপের নাগরিকরা এবং দেশের বাইরে থাকা অনেক ব্রিটিশ নাগরিক* ভোট দিতে না পারলেও ৫ লক্ষ ব্রিটিশ (নাগরিক) বাঙ্গালীর পাশাপাশি, কমনওয়েলথ দেশের নাগরিক হবার সুবাদে ২ লক্ষ ইমিগ্রেন্ট বাঙ্গালীও ভোট দেয়ার অধিকার পাচ্ছে । কেউ কেউ ব্রিটেনে কমনওয়েলথ নাগরিকদের পাওয়া অনাকাংক্ষিত এই ভোটের অধিকারকে ব্রিটিশ ইম্পেরিয়ালিজম হ্যাংওভারের হিসেবে অভিহিত করলেও আপাতত সেই আলাপে যাচ্ছি না । এই লেখার মুল বিষয় ইউ রেফারেন্ডামের ব্যপারে বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনা নিয়ে ।
বাঙ্গালী পাড়ার ভাবনার বিষয়ে বিশদ আলোচনার আগে এই রেফারেন্ডামের একটা ওভারভিউ দেয়ার চেষ্টা করি । ক্যাম্পেইনের শুরু থেকেই ব্রিটিশ সোসাইটি মুলত দুই ভাগে বিভক্ত ।
অর্থনীতি এই আলোচনা থেকে বাদ রাখছি কারন ইউকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন গবেষেনা সংস্থা বেশ পরিষ্কার ভাবেই আশংকার কথা জানিয়ে দিয়েছে [3,4,5] । আইএমএফ এর ফোরকাস্ট বলছে ইউ ছেড়ে বেরিয়ে এলে আগামী কয়েক বছরে ব্রিটেনের অর্থনীতি ৫% পর্যন্ত সংকুচিত হয়ে আসতে পারে।
আঈন প্রনয়নের স্বার্বভৌমত্বের যুক্তিটিও মুলত উগ্র জাতীয়তাবাদী ইংলিশদের ক্ষয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যবাদের অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে ভোট ক্যাশ করার চেষ্টা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুর্য ডুবেছে মেলা বছর। তবু এদেশের পঞ্চাশোর্ধ অনেক নাগরিকই সেই সাম্রাজ্যের অতীতের স্মৃতি রোমমন্থনে বুদ। ইউ এর পাশ করা বিভিন্ন আঈন পরিবেশ রক্ষায় ( গ্রীন এবং ক্লীন এনার্জি পলিসি) এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। পুঁজিবাদী দেশ ব্রিটেনে শ্রমিকের অনেক অধিকারও ( সবেতনে বাতসরিক ছুটি, পিতৃত্বকালীন ছুটি) ইউ এর প্রনীত আঈনের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে। এই আঈনগুলো না থাকলে পুঁজিবাদ বান্ধব যে কোন সরকার এই অধিকার গুলো কমিয়ে ফেলতে পারে ।
প্রথম থেকেই যেই বিষয়টি এই রেফারেন্ডামে ইউ ছেড়ে যাওয়ার পক্ষের গাড়ির চাকা সচল রেখেছে সেটা হলো ইমিগ্রেন্ট বিরোধী আবেগ। আগেই বলেছি ব্রিটেনের একটা বড় জনগোষ্ঠির দাবী ইমিগ্রেন্টরা তাদের চাকরী এবং বিভিন্ন সরকারী ভাতায় ভাগ বসাচ্ছে। প্রতিদেশেই এই মানসিকতার লোক থাকে। বাংলায় এর কোন সঠিক অনুবাদ আছে কিনা জানিনা, তবে ইংরেজিতে এদের সাধারণত "বিগটস" বলা হয় । এরা নিজের অযোগ্যতা, অকর্মন্যতা এবং দুর্ভাগ্যের জন্য হয় অন্য কাউকে দায়ী করে তা সে অন্য দেশের ইমিগ্রেন্টই হোক বা নিজ দেশের অন্য অঞ্চলের লোকই হোক ।
মজার বিষয় হচ্ছে এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর রেফারেন্ডামে সাদা চামড়ার উগ্র জাতীয়বাদীদের পাশাপাশি প্রবাসী বাঙ্গালী গোষ্ঠির একটা বড় অংশ যোগ দিয়েছে । সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কুফল নিয়ে বেশ জোর গলায় বক্তৃতা রাখছে এবং প্রচারনা চালাচ্ছে । প্রথম বা দ্বিতীয় জেনারেশন মাইগ্রেন্ট বাঙালীর হঠাৎ এমন উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ থেকেও বেশি ব্রিটিশ হয়ে ওঠাটা বেশ দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে [ ** বিষয়টা শুধু বাঙ্গালীতেও সীমাবদ্ধ নয় । অনেক ভারতীয় এবং পাকিস্তানি একই রাস্তার আছে ] ।
কারন খুজতে গিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে কয়েকটা কারণ খুজে পেলাম ঃ
ক) বিভিন্ন সরকারী ভাতার হ্রাস ঃ
ব্রিটেনে বিভিন্ন সরকারী ভাতার সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা মাথাপিছু অন্য যেকোন জাতি গোষ্ঠির চেয়ে বেশ এগিয়ে । প্রায় ৭০% বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্রিটিশ পরিবার নিম্ন আয়ের ক্যাটাগরিতে পড়ে [6] । এদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারী ভাতার উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাঙ্গালীদের মধ্যে এই ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের অপব্যপবহার প্রবনতাটাও বেশি [7] । গত ৫ বছরে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর অর্থ নীতির কারনে ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের বিভিন্ন খাতে ( বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ) ভাতা কমে গেছে । ব্রিটেনের উগ্রবাদী সাদাদের মত বাঙ্গালীরাও এই ভাতা কমে যাওয়ার জন্য ইয়োরোপের নাগরিকদের দায়ী করছে । যদিও ব্রিটেনের কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের এক পরিসংখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারী ভাতা দাবী করা নাগরিকদের মাত্র ২% ইয়োরোপীয় [৮] ।
খ) কর্ম সংস্থান ঃ
গত কয়েক বছরে ব্রিটেনের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের ( গ্রীস, স্পেন ) অর্থনৈতিক মন্দার কারনে এসব দেশের প্রচুর নাগরিক কাজের সন্ধানে ব্রিটেনের এসেছে । বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন ( এক দশকের কম সময় ধরে এখানে থাকা মাইগ্রেন্টরা ) অভিবাসীদের একটা বড় অংশ মুলত আনস্কিল্ড কাজ করেই থাকাখাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ চালায় । শ্রম বাজারে যোগান বেশি হওয়ায় প্রতিযোগীতাও বেড়েছে । এটাও বাঙ্গালীর ইয়োরোপীয়ান বিরোধী সেন্টিমেন্টের আরেকটা কারন ।
গ) বর্ণবাদ এবং শাসকগোষ্ঠির সাময়িক বন্ধুবাৎসল্যতা ঃ
বাঙ্গালীরা ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় ইন্সটিউটিউশনাল রেসিজমের স্বীকার হলেও ২০০ বছরের ব্রিটিশ দাসত্ব আমাদের উগ্র বর্ণবাদী ব্রিটিশ দুর্ব্যবহারে অভ্যস্ত করে দিয়েছে । অবচেতন মনে আমরা ব্রিটিশদের সুপিরিওর জাতি মানতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করি । ব্রিটিশ প্রভুরা যখন আমাদের দুই এক লাইন ইংরেজী শুনে আমাদের ইংরেজীর প্রশংসা করে আমরা বেশ গদগদ হয়ে যাই । তবে অর্ধশিক্ষিত এক ব্রিটিশের কোন হুকুম মেনে নিতে শিখলেও ভাঙা ভাঙা ইংরেজী বলা অন্যান্য ইয়োরোপের নাগরিককে আমরা ইংরেজী না জানা গ্রাম্য অশিক্ষিতের চেয়ে বেশি সম্মান দিতে রাজী নই । তাছাড়া এই ইয়োরোপীয়ান খেদানোর আন্দোলনে উগ্রপন্থী ব্রিটিশরা আমাদের একই নৌকায় ঠাঁই দিয়েছে এটাও আমাদের জন্য বেশ আনন্দের বিষয় । তাই নিজেদের ব্রিটিশবান্ধব প্রমান করে আমরাও বেশ জোরেশোরে ইয়োরোপীয়ানদের গালি দিচ্ছি ।
একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা
জো কক্স ইয়র্কশায়ারের ছোট্ট একটা শহরের নবনির্বাচিত এমপি । গত বছরের সাধারন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে । সকল বর্ণ গোত্রের মানুষ নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য । সিরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরনার্থীদের নিয়েও নিরলস কাজ করে গিয়েছে জো । এমপি নির্বাচিত হবার আগে চেষ্টা করেছে বিভিন্ন চ্যারিটির মাধ্যমে ত্রান সংগ্রহ করতে রিফিউজিদের জন্য । এমপি নির্বাচিত হবার পর প্রভাব খাটিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে সিরিয়ান শরনার্থীদের সাহায্য করতে । সপ্তাহের একদিন এলাকার ভোটারদের সাথে গনসংযোগের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সমস্যা শোনার চেষ্টা করে জো । গত ১৬ জুনও ছিল তেমন এ একটি দিন । গনসংযোগ শেষ করে লাইব্রেরীর বাইরে এসে দাড়ানো মাত্রই টমি মেয়ার নামের এক উগ্র শেতাংগ গুলি করে এবং কুপিয়ে আহত করে জো কে । বিকালে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে জো । অকালেই ঝরে যায় তরুন নিবেদিত প্রান একজন মানুষ । হামলার সময় টমি মেয়ারের স্লোগান ছিল, “ডেথ টু ট্রেইটরস, ফ্রিডম টু ব্রিটেন [ বিশ্বাসঘাতকদের হত্যার করে ব্রিটেনকে মুক্ত কর ] ” । আমার মত খুঁতখুতে মনের লোকজন উগ্র বর্নবাদী গোষ্ঠির ইমিগ্রেন্ট বিরোধী নোংরা প্রচারনার সাথে এই হত্যার সম্পর্ক পেলেও উগ্র শেতাংদের মত বাংলাদেশীদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না । তারা এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছেন ।
শেষ কথা
বর্ণবাদের বিষাক্ত মানসিকতা ব্রিটেনে শুধু উগ্রবাদী শেতাংগ সুপ্রেমিস্ট দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । মুলধারার অনেকের ভদ্রতার খোলসের ঠিক নিচেই এর বাস । ঘৃনা এবং বর্নবাদ অনেকটা চেপে থাকা আগ্নেয়গীরির মত, একটু নাড়াচাড়া খেলেই বেশ জোরেসোরে বের হয়ে আসে । বাংলাদেশের জামাত যেমন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে, রুপে দেখা দেয়, ব্রিটেনে এই শেতাংগ সুপ্রেমিস্টরাও কখনো ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (ইডিএল), কখনো ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ( বিএনপি ), কখনো ব্রিটেন ফার্স্ট । আরব এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইসিসের উত্থান, ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো রসদ যোগাচ্ছে এই উগ্র শেতাঙ্গ দল গুলোর উত্থানে [11] । গত কয়েক বছর ব্রিটেনে এদের অনেকেই জড়ো হয়েছে ইউকে ইন্ডেপেন্ডেন্স পার্টি ( ইউকিপ ) নামের বর্ণবাদী দলের ছায়াতলে । বিভিন্ন সময় দলের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনের নোংরা বর্নবাদী আচরন প্রকাশ পাবার পরেও যখন ব্রিটেনের ১০% ( ৪০ লক্ষ ) ভোটার তাদের ভোট দেয় তখন বর্ণবাদের ভুত যে বেশ ভালো ভাবেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সেটা বুঝতে রকেট সাইন্টিস্ট হবার দরকার হয় না ।
ইউকিপের নেতা নাইজেল ফারাজ [ছবি উপরে] কয়েকদিন আগেই তার ইয়োরোপীয়ান খেদানোর আন্দোলনের নতুন পোস্টার উন্মোচন করেছেন । পোস্টারটা ভয়ানক বর্নবাদী এবং জীবন নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকার কোটি কোটি শরনার্থীদের জন্য চরম অবমাননাকর ।পোস্টারের মুল বক্তব্য অনেকটা এমন, “হাজার হাজার সিরিয়ান শরনার্থী আসছে ইয়োরোপের দিকে ধেয়ে । ব্রিটেন ইয়োরোপের সদস্য থাকলে আমাদেরও এই শরনার্থীদের দায় ভার নিতে হবে । ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়াই তাই বুদ্ধিমানের কাজ ।”
ইয়োরোপের অন্যান্য দেশগুলো সিরিয়া থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর দায়িত্ব নিলেও ব্রিটেন হাজার খানেকের বেশি নেয় নি । ব্রিটিশ বাঙ্গালী প্যালেস্টাইন, সিরিয়ার রিফিউজিদের জন্য কাঁদিয়ে বুক ভাসিয়ে, ফেসবুকে হাজারে হাজারে পোস্ট, লাখো লাখো লাইক দেয় কিন্তু ব্রিটেনের রাস্তায় সিরিয়া থেকে আরো বেশি শরনার্থী নেয়ার ব্যপারে কোন আন্দোলন করতে নামে নি । ব্রিটেনের শেতাঙ্গ লোকজন কোটি কোটি টাকার ত্রান পাঠালেও, ব্রিটেনের বাঙ্গালীরা আইসিসের জন্য শ খানেক জিহাদী পাঠানো ছাড়া আর তেমন কিছুই দিতে পারেনি । তা এই ব্রিটিশ বাঙ্গালী এখন নাইজেল ফারাজের মত বর্নবাদী লোকের পিছনে দাড়িয়ে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী স্লোগান দিবে এতে আশ্চর্য হবার আসলে কারন নেই । কারন তাদের মুল ভয় নতুন শরনার্থীরা তাদের সরকারী ভাতায় ভাগ বসাবে, কাজে ভাগ বসাবে ।
তবে বাঙ্গালী যেটা ভুল করছে তা হলো বর্নবাদের ভুত কেবল ইয়োরোপীয়ান খেদানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না । এখন তারা নাইজেল ফারাজের মত লোক এবং তার বর্ণবাদী সমর্থক গোষ্ঠিকে সমর্থন নিয়ে তাদের পেশী শক্তিশালী করে তুলছে । ইয়োরোপীয়ান খেদানোর পর সেই বর্ণবাদী পেশী তাদের দিকে নজর ঘোরাবে ।
তথ্যসুত্র ঃ
1. https://en.wikipedia.org/wiki/British_Bangladeshi
2. http://www.migrationobservatory.ox.ac.uk/briefings/migrants-uk-overview
3. http://www.bbc.co.uk/news/uk-politics-eu-referendum-36371700
4. http://www.bbc.co.uk/news/business-36561720
5. http://tinyurl.com/gvnujcx
6. http://www.poverty.org.uk/06/index.shtml
7. http://www.express.co.uk/news/uk/579780/Police-raids-benefit-scheme-migrants
8. http://www.telegraph.co.uk/news/uknews/immigration/11255425/How-much-do-immigrants-really-claim-in-benefits.html
9. http://tinyurl.com/h6dfx4c
10. http://www.theguardian.com/politics/2016/jun/16/nigel-farage-defends-ukip-breaking-point-poster-queue-of-migrants
11. http://www.huffingtonpost.co.uk/2014/05/26/far-right-europe-election_n_5391873.html